জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে লাখ লাখ টাকার বেশি সম্পদ অর্জন এবং সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমার ও তার স্ত্রী শিল্পী রানী সরকারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানটির একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। আসামিরা হলেন- নাটোরের লালপুর উপজেলার দেলুয়া গ্রামের উত্তম কুমার, তিনি বর্তমানে সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এরআগে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী শিল্পী রানী সরকার। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে অসাধু উপায়ে সম্পদ অর্জন করে তা নিজের দখলে রেখেছেন উত্তম কুমার। তার এই কর্মকাণ্ড দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলার অনুমোদন পাওয়ার পর নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তে নতুন তথ্য বা অন্য কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার একটি এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য মিললে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস দেওয়া হয়। নোটিস অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি ফরম পূরণ করে নিজের স্বাক্ষরে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। বিবরণীতে তিনি মোট ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৪ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। যাচাইয়ে একই পরিমাণ সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তার বৈধ আয়ের পরিমাণ ধরা হয় ৮৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮০২ টাকা এবং পারিবারিক ব্যয়সহ মোট ব্যয় ৪৮ লাখ ৩ হাজার ১৮৩ টাকা। ফলে বিবেচ্য সময়ে তার নেট বৈধ আয় দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৬১৯ টাকা। এ অবস্থায় ঘোষিত সম্পদের সঙ্গে বৈধ আয়ের অমিল হিসেবে ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৯০৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদিকে আরেকটি মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিল্পী রানী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে নিজ ও নির্ভরশীলদের নামে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে তিনি স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ১৮০ টাকা সম্পদের ঘোষণা দেন এবং দেনা দেখান ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৪ টাকা। তবে যাচাই-বাছাইয়ে তার নামে প্রকৃত সম্পদ পাওয়া যায় ১ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০২ টাকা, দেনা পাওয়া যায় ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। দেনা বাদ দিলে তার নীট সম্পদ দাঁড়ায় ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৭ টাকা। তার গ্রহণযোগ্য ও বৈধ আয় হিসেবে পাওয়া যায় মাত্র ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৮ টাকা। অর্থাৎ বৈধ আয়ের তুলনায় ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টাকা সম্পদ বেশি পাওয়া যায়, যা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিল্পী রানী সরকার তার চাকরিজীবী স্বামী উত্তম কুমারের অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ ব্যবহার করে নিজের নামে ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতেও তিনি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। উত্তম কুমার অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থকে বৈধ করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে। শিল্পী রানী সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অপরাধ করেছেন। উত্তম কুমার তার স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সহযোগী অপরাধ করেছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন
রাজস্ব কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
- আপলোড সময় : ২১-১১-২০২৫ ১২:৩৫:২৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২১-১১-২০২৫ ১২:৩৫:২৪ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার